খুলনায় ১১ হাজার যৌনকর্মী:
৭২টি হোটেলে দেহ ব্যবসা
এম শিমুল খান, খুলনা অফিস
খুলনা, ১৯ ডিসেম্বর:
খুলনা মহানগরীতে আশঙ্কাজনক
হারে বাড়ছে যৌনকর্মীর সংখ্যা।
ইতোমধ্যে পেশাদার ও অপেশাদার
মিলিয়ে যৌন কর্মীর
সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় ১১ হাজার।
খুলনা মহানগরীসহ জেলার
৭২টি আবাসিক হোটেলে যৌন কাজ
চলছে। এছাড়া নিরালা, সোনাডাঙ্গা ও
খালিশপুর আবাসিক এলাকায়
বিউটি পার্লার ও একাধিক
ভাড়া বাড়িতে গড়ে ওঠেছে মিনি
পতিতালয়।
খুলনা মহানগরীর একাধিক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যৌন
কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগও
পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত কর্মস্থানের
অভাবে খুলনা অঞ্চলের
নারীরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত
হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এক্ষেত্রে নারীরা অর্থের
বিনিময়ে তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ
বিলিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করছে না।
খুলনা মহানগরীতে দেহ বিক্রির
মতো ঘৃণ্যতম পেশায় যুক্ত হয়েছে প্রায়
১১ হাজার নারী। যা প্রতি বছর
বেড়েই চলেছে।স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্জয়
নারী সংঘের ২০১১ সালে হিসাব
অনুযায়ী খুলনা মহানগরীতে পেশাদার
যৌন কর্মী রয়েছে পাঁচ হাজার ৮শ’ জন।
যা গত দু’বছরে আরো প্রায় ৯শ’ জন
বেড়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির
মতে পেশাদার যৌন
কর্মী বলতে যারা জীবিকা নির্বাহের
জন্য দেহ বিক্রিকে একমাত্র অবলম্বন
হিসাবে বেছে নিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনের
২০১১ সালের তথ্য
অনুযায়ী খুলনা মহানগরীতে অপেশাদার
যৌন কর্মী বলতে বোঝায়,
যারা একটি নির্দিষ্ট পেশায় যুক্ত
থেকে বিশেষ চাহিদা পূরণে দেহ
বিক্রি করে। এছাড়াও
রয়েছে ভ্রাম্যমান যৌন কর্মী। দেশের
বিভিন্ন প্রান্ত
থেকে এসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য
কাজ করে চলে যাওয়াকে বোঝায়। যৌন
কর্মীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান
করছে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
স্টেপ ফর হিউম্যান এ্যাসেষ্ট
ডেভলপমেন্ট সংক্ষেপে শার্ড এর
তথ্যানুযায়ী খুলনা মহানগরীসহ জেলারপুলিশের একটি সূত্র ও হোটেল সংলগ্ন
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়
অধিবাসীরা জানায়, খুলনা মহানগরীর
নিরালা, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর,
দৌলতপুর, রূপসা, বয়রা এলাকায়
কর্মকণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন সময়
এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ
করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতায়নে কোন
ফল হয় না। অসাধু পুলিশের সহযোগিতায়
খুলনা মহানগরীর বেশ কিছু
ভাড়া বাড়ীতে এক শ্রেণীর চরিত্রহীন
মহিলা বিভিন্ন স্থান থেকে যৌন
কর্মীদের সংগ্রহ করে আত্মীয়ের
পরিচয় দিয়ে দেহ
ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর
মধ্যে খুলনা মহানগরীর ডালমিল মোড়
এলাকা, নিরালা এলাকার
দুটি বাড়ীতে, ইকবালনগর স্কুলের
পার্শ্বে একটি বাড়ীতে,
টুটপাড়া এলাকার মাদকাসক্ত এক
মহিলার নেতৃত্বে একটি বাড়ীতে,
সোনাডাঙ্গা থানার একটি বাড়ীতে ও
খালিশপুর হাউজিংয়ের
একটি বাড়ীতে স্বামী পরিত্যাক্তা
সরকারী চাকুরীজীবী এক মহিলার
নেতৃত্বে দেহ ব্যবসা চলছে।
বাসা বাড়ীগুলোতে গড়ে ওঠা মিনি
পতিতালয়ের সর্দানীদের
সাথে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন
স্থানে যৌন কর্মীদের
সাথে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। বিভিন্ন
সময় তারা এসব যৌন কর্মীদের
খুলনা নিয়ে আসছে।
সম্প্রতি নিরালা আবাসিক এলাকার
একটি বাড়ী থেকে ঢাকার নয় যৌন
কর্মীকে আটক করে খুলনা থানা পুলিশ।
এছাড়া খুলনা মহানগরীর
অলি গলিতে গড়ে ওঠা বিউটি পার্লারেও
দেহ ব্যবসা চলছে অহরহ।গোয়েন্দা পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের
একটি সূত্র জানায়, খুলনা নিউ
মার্কেটে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ
শতাধিক কলগার্ল বিচরণ করে।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে তারা ক্রেতাদের
আকৃষ্ট করে থাকে। এক শ্রেণীর দালাল
তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন
করে খরিদদারদের দেয়।
এক্ষেত্রে মোবাইলের মাধ্যমেই
যোগাযোগ করা হয়।
সোনাডাঙ্গা থানার করিম নগর
এলাকার দুই মেয়ে নিউ মার্কেট
থেকে ক্রেতা বা খরিদদারদের
সাথে কল গার্লদের কন্ট্রাক্ট
করে দেয়। খুলনা মহানগরীর
বয়রা এলাকার হোস্টেল ও
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যৌন
কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ
দীর্ঘদিনের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির
হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের অসংলগ্ন
চলাফেরার কারণে সম্প্রতি কলেজ
কর্তৃপক্ষ বিধি নিষেধ আরোপ
করলে লঙ্কাকা- শুরু হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক শিক্ষক
এই প্রতিনিধিকে জানান, আবাসিক
হলের মেয়েদের চলাফেরায় মনে হয়
তারা এদেশের বাসিন্দা নয়। এছাড়াও
খুলনা মহানগরীর হোটেল বসুন্ধরা,
হোটেল শাহীন, হোটেল কদর, হোটেল
শেরাটন, খুলনা হোটেল, হোটেল আরাম,
হোটেল বৈশাখী, হোটেল সুন্দরবন,
হোটেল পার্ক, হোটেল আরাফাত, হোটেল
ক্যাসল সালাম, হোটেল বরিশাল,
হোটেল মুন, হোটেল প্যারাডাইস,
হোটেল সাতক্ষীরা, হোটেল সান লাইট,
হোটেল মালেক, হোটেল জেলিকো,
হোটেল এনিটা, হোটেল ওয়েষ্টার্ণ ইন,
হোটেল মিলিনিয়াম, হোটেল সোহাগ,
হোটেল সোহাগ মিলন, হোটেল জননী,
হোটেল কার্তিনিয়া, হোটেল
পল্লবী আবাসিক হোটেলেই দেহ
ব্যবসা চলছে অবিরামভাবে। এর
মধ্যে হোটেল মিলেনিয়াম কর্তৃপক্ষ
আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য বাড়তি কিছু
সংযোজন করেছে। সোনাডাঙ্গার
আবাসিক এলাকায়
একটি বাড়ী ভাড়া করে রেষ্ট হাউজ
বানানো হয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই ওই
রেষ্ট হাউজের অভ্যন্তরে বসে বিশাল
মদের আসর। সেই সাথে থাকে বিভিন্ন
স্থান থেকে সংগৃহীত
সুন্দরী রূপসী রমনী। উক্ত রেষ্ট
হাউজে সন্ধ্যার পরেই ভীড় জমায়
শহরের নামী দামী ব্যবসায়ীরা।
পাশাপাশি হাজির হয় বিভিন্ন
শ্রেণীর উচ্চ বিত্তশালী ব্যক্তিরা।
আবাসিক হোটেলগুলো থেকে নিয়মিত
মাসোহারা নিয়ে দেহ ব্যবসায়
সহায়তা করছে সংশ্লিষ্ট
দুর্নীতি পরায়ন কর্তব্যরত কতিপয়
পুলিশ কর্মকর্তা ও অক্ষ্যাত পত্রিকার
নামধারী কিছু সাংবাদিক। লোক
দেখাতে মাঝে মধ্যে চালানো হচ্ছে
নিঃস্ফল পুলিশী অভিযান।
পুলিশ ও একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়,
খুলনা মহানগরীসহ জেলার আবাসিক
হোটেলগুলোকে রাতের চেয়ে দিনের
বেলায় দেহ
ব্যবসা চলে বেশি মাত্রায়। পুলিশ
প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন
হোটেলসহ আবাসিক এলাকার
মিনি পতিতালয় নামে খ্যাত
স্থানগুলিতে অভিযান
চালিয়ে গ্রেফতারপূর্বক
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট
মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ উধ্বর্তন
কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ
কামনা করছে খুলনার সুশীল সমাজসহ
সচেতন জনসাধারণ।